ভূমিকা:
২১শ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে এসে বিশ্ব এক বহুমাত্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্যদিকে গাজা-প্যালেস্টাইন সংকট; প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন যেমন আশার বার্তা বহন করছে, তেমনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ঘন ঘন ঘটছে, আর মানবাধিকার লঙ্ঘন এখনো বহু দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
১. আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও সংঘাত:
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ:
২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ২০২৫ সালেও থামার কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। এই যুদ্ধ শুধু ইউরোপ নয়, গোটা বিশ্বের খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
গাজা-ইসরায়েল সংকট:
গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। জাতিসংঘ একে মানবিক বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী এই ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট।
আফ্রিকার সামরিক অভ্যুত্থান:
নাইজার, সুদান, ও মালি-সহ একাধিক আফ্রিকান দেশে সেনা শাসন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গণতন্ত্র ব্যাহত হচ্ছে এবং এতে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব বাড়ছে।
---
২. প্রযুক্তির অগ্রগতি ও উদ্বেগ:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI):
OpenAI, Google, Meta ও অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির এআই মডেল যেমন ChatGPT, Gemini বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতে বিপ্লব আনছে। তবে এই প্রযুক্তি যদি নিয়ন্ত্রণহীন হয়, তা হলে তা মানবজাতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও মানবদেহের হস্তক্ষেপ:
CRISPR প্রযুক্তি দিয়ে জেনেটিক মডিফিকেশন এখন অনেক সহজ। এটি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হলেও ভবিষ্যতে ‘ডিজাইনার বেবি’ নিয়ে নৈতিক প্রশ্ন উঠছে।
সাইবার যুদ্ধ ও ডাটা নিরাপত্তা:
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ এখন সাইবার হুমকির মধ্যে রয়েছে। হ্যাকাররা দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে, যেমন পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ ও ব্যাংকিং সিস্টেম।
৩. জলবায়ু সংকট ও পরিবেশ বিপর্যয়:
তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
২০২4 সাল ছিল ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর। গ্লেসিয়ার গলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, দাবানল ও বন্যা দেখা যাচ্ছে।
COP সম্মেলন ও ব্যর্থ প্রতিশ্রুতি:
বছর বছর জলবায়ু সম্মেলন হলেও বড় দেশগুলো (যেমন: চীন, আমেরিকা) এখনো কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে দ্বিধাগ্রস্ত। ফলে ‘নেট-জিরো’ লক্ষ্য দুরূহ হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশসহ উপকূলীয় দেশগুলোর বিপর্যয়:
বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো নিম্নভূমি দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে।
৪. মানবাধিকার, উদ্বাস্তু ও বৈষম্য:
রোহিঙ্গা সংকট:
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন আজও অনিশ্চিত। মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট ও সামরিক দমনপীড়নে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
উইঘুর মুসলিম নিপীড়ন:
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চলছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে ‘জেনোসাইড’ বললেও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপ কার্যকর হয়নি।
বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু সমস্যা:
জাতিসংঘের মতে, বর্তমানে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত – যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ। যুদ্ধ, রাজনৈতিক নির্যাতন ও জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
৫. ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও করণীয়:
সামাজিক সচেতনতা ও নেতৃত্ব:
বিশ্বে নতুন প্রজন্ম সামাজিক ন্যায়বিচার, জলবায়ু ও প্রযুক্তি নৈতিকতা বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠছে। তারা পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন, মানবিক মূল্যবোধ ও প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহারের দাবি তুলছে।
আন্তর্জাতিক সংহতি প্রয়োজন:
জাতিসংঘ, G20, ব্রিকস—এসব প্ল্যাটফর্মগুলোকে শুধু বিবৃতি নয়, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যুদ্ধ নয়, কূটনীতি ও মানবিক সহানুভূতির ভিত্তিতে সমাধান খুঁজতে হবে।
উপসংহার:
বিশ্ব এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। প্রযুক্তির আশীর্বাদ যেমন সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহার ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মানবতা, ন্যায্যতা, পরিবেশ রক্ষা ও শান্তির জন্য গোটা পৃথিবীকেই একসাথে কাজ করতে হবে—তা না হলে আমরা এমন এক ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছি, যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হবে।
ফজর | ৫.৩০ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১.৩০ মিনিট দুপুর |
আছর | ৪ টা বিকাল |
মাগরিব | ৬ টা সন্ধ্যা |
এশা | ৭.৩০ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৪০ মিনিট দুপুর |